প্রতিষ্ঠাতা তথ্য



সদ্ধর্মাদিত্য শ্রীমৎ জ্ঞানশ্রী মহাথের:

সদ্ধর্মাদিত্য শ্রীমৎ জ্ঞানশ্রী মহাথেরর জন্ম ১৯২৫ সালে চট্টগ্রাম জেলাধীন রাউজান থানার অন্তর্গত উত্তর গুজরা ডোমখালী গ্রামে।তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের উপ-সংঘরাজ। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করছেন। তিনি ১৯৪৪ সালে শ্রামণ এবং ১৯৪৯ সালে ভিক্ষু হিসেবে উপসম্পদা লাভ করেন। তিনি প্রবেশিকা পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে আসেন। তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষু হলেও কেবল ধর্মীয় ধ্যান সাধনার মধ্যে আবদ্ধ থাকেননি। তিনি তৎকালীন পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দীন-হীন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা দেখে ধর্মীয় সাধনার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে পার্বত্য অঞ্চল ও সমতল এলাকায় অনেক ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৬১ সালে বর্তমান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলায় পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন (যদিও পরে সেটা পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ধ্বংস হয়ে যায়)। ১৯৭৪ সালে তারই আর্থিক সহযোগিতায় ও সার্বিক দিকনিদেশনায় মোনঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। দু:স্থ, অনাথ ও অসহায় শিশুদের সাধারণ শিক্ষাদানের লক্ষ্যে মোনঘরের অধীনে আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরেও তিনি চট্টগ্রাম, জয়পুরহাট ও রংপুরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

 

 

শ্রীমৎ বিমল তিষ্য মহাথের:

শ্রীমৎ বিমল তিষ্য মহাথেরর জন্ম ১৯৪৫ সালে বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলায় উদালবাগানে। তাঁর পিতার নাম প্রয়াত বাত্যা চাকমা ও মাতার নাম প্রয়াতা পরানী চাকমা। তিনি ১৯৬৩ সালে সদ্ধর্মাদিত্য শ্রীমৎ জ্ঞানশ্রী মহাথেরর নিকট শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষিত হন এবং পরবর্তীতে উপসম্পদা গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে তাঁর দীক্ষাগুরু সদ্ধর্মাদিত্য শ্রীমৎ জ্ঞানশ্রী মহাথেরর নির্দেশক্রমে অধুনালুপ্ত পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন তিনি পড়ুয়া অবস্থায় ছিলেন। ১৯৭৪ সালে মোনঘর এবং ১৯৮০ সালে মোনঘরের অধীনে মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। উভয় প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় পার্বত্য বৌদ্ধসংঘ এবং পরে শাক্যমুণি বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি পার্বত্য বৌদ্ধসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সময়ে পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমটি ধ্বংস হয়ে গেলে তিনি ভারতে দেশান্তরী হন। বর্তমানে তিনি কোলকাতায় বসবাস করছেন। সেখানে তিনি ‘শিশু করুণা সংঘ’ ও ‘বোধিচরিয় বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। বোধিচরিয় বিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে সেখানে অন্যতম স্বনামধন্য বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

শ্রীমৎ প্রজ্ঞানন্দ মহথের:

শ্রীমৎ প্রজ্ঞানন্দ মহথেরর জন্ম ১৯৫২ সালে খাগড়াছড়ি জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ায়। তাঁর গৃহী নাম ছিলো বলেন্দ্র দেব চাকমা। তাঁর পিতার নাম প্রয়াত নরেন্দ্র লাল চাকমা ও মাতার নাম প্রয়াত ইন্দ্রপতি চাকমা। তিনি ১৯৬৭ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক ও ১৯৭২ সালে হাটহাজারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পালি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক পাস করার পর সদ্ধর্মাদিত্য ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরর নিকট শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষিত হন এবং পরে উপসম্পদা গ্রহণ করেন। তার দীক্ষাগুরুর পদাংক অনুসরণ করে নিজেকে মানবতার সেবায় আত্মনিবেদিত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলের অনাথ ও দু:স্থ শিশুদের কল্যাণ ও শিক্ষা বিস্তারে মহান ব্রত গ্রহণ করেন। ছাত্র অবস্থায় তার দীক্ষাগুরুর নির্দেশক্রমে তিনি অধুনালুপ্ত পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে মোনঘর প্রতিষ্ঠা করা হলে তিনি এর সাধারণ সম্পাদক হন। মোনঘর পরিচালনা পর্ষদে প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে দীর্ঘদিন ধরে মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় মিরপুরে অবস্থিত ‘বনফুল আদিবসী গ্রিনহার্ট স্কুল এন্ড কলেজে’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শ্রীমৎ শ্রদ্ধালংকার মহাথের:

শ্রীমৎ শ্রদ্ধালংকার মহাথেরর জন্ম রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন লংগদু উপজেলায় ১৯৫১ সালে। তিনি ১৯৬৬ সালে সদ্ধর্মাদিত্য ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরের নিকট শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষিত হন এবং ১৯৭২ সালে উপসম্পদা গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে মাধ্যমিক পাস করার পর ছাত্র অবস্থায় তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলায় অধুনালুপ্ত পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে পালি ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (সম্মান) ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অবস্থায় ১৯৭৮ সালে তিনি মোনঘরের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মোনঘর শিশুসদনের কার্যক্রম পরিচালনা ও শিশুদের দেখাশুনার পাশাপাশি তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যান। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি মোনঘর শিশুসদনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি মোনঘর কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-সভাপতি এবং মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি চাকমা ভাষা শিক্ষাদান ও চাকমা বর্ণমালা উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মোনঘর পালি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা সদরের ভেদভেদিস্থ সংঘারাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে সেখানে অবস্থান করছেন।

ভদন্ত প্রিয় তিষ্য ভিক্ষু (সজ্জন চাকমা)

ভদন্ত প্রিয়তিষ্য ভিক্ষুর জন্ম দীঘিনালা উপজেলার বাঘাইছড়ি মুখএলাকায়। তারগৃহী নাম সজ্জন চাকমা। তিনি মোনঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শ্রামণ হিসেবে তিনি পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমে ১৯৬৪ সালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তিনি সদ্ধর্মাদিত্য ভদন্ত জ্ঞান শ্রীমহাথের উপাধ্যায়ত্বে ভিক্ষু হিসেবে উপসম্পদা লাভ করেন। মোনঘর প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি রাঙ্গাপানি মিলন বিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে এসেছিলেন। মোনঘর প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্ব পূর্ণভূমিকা পালন করেন। তিনি বর্তমান সন্ন্যাস জীবন ছেড়ে গৃহী হিসেবে পরিবার পরিজন নিয়ে বর্তমানে কোলকাতায় বসবাস করছেন।

ভদন্ত জীন পালভিক্ষু (সুভাষ চাকমা)

তার জন্ম দীঘিনালা উপজেলায়। তার গৃহী নাম ছিলো সুভাষ চাকমা। তিনি শ্রামণ হয়ে ১৯৬৮ সালে পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমে ভর্তি হয়েছিলেন। ভদন্ত সদ্ধর্মাদিত্য জ্ঞান শ্রীমহাথেরর উপাধ্যায়ত্বে তিনি উপসম্পদা লাভ করেন। তখন তার নাম হয় জীন পালভিক্ষু। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম ও মোন ঘরের জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি মোন ঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মোন ঘরের প্রতিষ্ঠা লগ্নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।পরে তিনি সন্ন্যাস জীবন ছেড়ে দিয়ে সাধারণ গৃহী জীবনে ফিরে আসেন।এরপর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে দীর্ঘ সময় চাকরী করেছিলেন। ২০০৯ সালে ১৫ জুলাই তারিখে পরলোক গমণ করেন।