প্রাক্তন প্রতিষ্ঠান প্রধানের বাণী

মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মিসেস লতিকা তালুকদার
(১ জানুয়ারী ১৯৮২ হতে ৯ জানুয়ারী ২০০৭)

মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মিসেস লতিকা তালুকদারের জন্ম ১০ জানুয়ারী ১৯৪৭ সালে। পিতার নাম প্রয়াত ধনঞ্জয় তালুকদার এবং মাতার নাম প্রয়াত পূণ্যবতী তালুকদার। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, বিএড। বর্তমানে মাঝেরবস্তি, তবলছড়ি, রাঙ্গামাটি সদর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় স্বামী সুভাষ সদয় চাকমা ও একমাত্র পুত্র জকি চাকমাকে নিয়ে অবসর জীবন-যাপন করছেন।
১৯৭১ সালে রাঙ্গামাটি সদরের রিজার্ভ বাজারস্থ নিউ রাঙ্গামাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে দু’বছর চাকরী করার পর চাকরী ছেড়ে দেন। এরপর রাঙ্গামাটিস্থ সিবিসি’-তে শিক্ষকতার পদে নিয়োগ পান। কিন্তু তিনি সেখানে যোগদান না করে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের মহান ব্রত নিয়ে ১৯৭৪ সালে তার কয়েকজন বন্ধুসহ খাগড়াছড়ি জেলা সদরে কমলছড়িতে একটি জুনিয়র হাই স্কুল খোলার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নিজেরাই বিদ্যালয় তৈরীর জন্য গাছ, বাঁশ, শন থেকে শুরু করে যাবতীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করে গ্রামবাসীদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় উক্ত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।সেখানে প্রথমে সহকারী শিক্ষিকা ও পরে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা এবং প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে ১৫ জানুয়ারী ১৯৭৪ হতে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
একমাত্র ছেলে জকির চাকমার জন্মের পর কিছু শারিরীক সমস্যা হওয়ার কারণে তিনি রাঙ্গামাটিতে ফিরে আসেন ।এরপর কমলছড়িতে তার আর ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে মোনঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও রূপকার শ্রদ্ধেয় বিমল তিষ্য মহাথের ও শ্রদ্ধেয় প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরর অনুরোধে দেশ ও জাতির সেবায় অবদান রাখার লক্ষ্য নিয়ে তিনি আবার শিক্ষকতায় ফিরে আসেন। ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারীতে অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সেই সময় থেকে দীর্ঘ ২৫ বছর অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষকতা করার পর ২০০৭ সালে ৯ জানুয়ারী তারিখে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

বলাবাহুল্য, তিনি যখন মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন, তখন মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়টি ছিলো বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরী।কয়েকটি শ্রেণীকক্ষ ছিলো। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০০ জনের মত। বিদ্যালয়কে একটি অনন্য শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রাণপণ পরিশ্রম করতে হয়েছিলো।মোনঘরের প্রতিষ্ঠাতামন্ডলী, শিক্ষকমন্ডলী ও মোনঘর শিশুসদনের সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত কর্ম প্রচেষ্টায় মোনঘর পার্বত্য অঞ্চলের একটি অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ে তিন পার্বত্য জেলা থেকে গরীব, অনাথ, অসহায় ও ছিন্নমূল শিশুরা শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছে। মোনঘর সত্যিই দুর্গম পাহাড়ের আলোক বর্তিকা হিসেবে কাজ করছে।

মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা আজ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অনেকে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত থেকে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন।